চুঙ্গাপুড়া সকল বয়সের নারী-পুরুষ বাচ্চাদের নিয়ে আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় এর আয়োজন। আর রাতের বেলা বাসের চুঙ্গায় বিন্নিচাল পানি ভরার আনন্দ। ঘরের পেছনে অথবা উঠানে ধপধপা আগুনে চুঙ্গাপুড়া। সব পুড়া হয়ে গেলে আগুন নিভিয়ে ঘরে নিয়ে চুঙ্গাপুড়া আর গরম বোয়াল মাছ ভাজি। আর সিলেটে পাঠানো হতো নানাবাড়ি, খালার বাড়ি, আপার বাড়ি সব জায়গায় কালিওয়ালা চুঙ্গাগুলোকে পেপারে মুড়িয়ে। ঠিক তেমনি করে আরো অনেক দূরেও। আমাদের বাড়িতে চুঙ্গাপুড়া স্পেশালিস্ট ছিলেন ছমীর দাদা।
নাটুনি- এটা সম্পূর্ণ মেয়েদের ডিপার্টমেন্ট। সারাদিন চাল, টাকা, লাকড়ী (খড়ি) জোগাড় করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর শুরু হতো চাল কোটা । এক সময় ঢেকি আর তারপরে ঘাইল ছিয়া। সারারাত ভরে তিন-চার রকমের পিঠা তৈরি হতো, খাওয়া হতো, আর সেই সাথে থাকত অনেক বিনোদন অনেক আনন্দ। গ্রামীণ মহিলারা কৌতুক, ছোট ছোট নাটক, আর ঐতিহ্যবাহী গীত দিয়ে সারা রাত কাটাতো। রাতে কয়েকবার চায়ের আসরও হতো। ফজরের নামাজের পর হতো পিঠা ভাটা (ভাগ করা)। এক হালি এক হালি করে ভাগে দেয়া শুরু হতো। বউল ভরা পিঠা নিয়ে সবাই যার যার ঘরে চলে যেতেন।
টুপা- গ্রামীণ কিশোরী-তরুণীদের আনন্দ উৎসব। ২-৩ দিন আগ থেকে প্ল্যানিং চলতো। টুপার দিনে সকাল থেকে সংগ্রহ চলতো, চাল, আলু, পিয়াজ, তেল, লবণ, মরিচ হলুদ। সব বাড়ির সিম গাছ থেকে বিচিওয়ালা সিম পাড়া। ফরাসের ক্ষেত থেকে ফরাস জোগাড় করা। ছোট মেয়েদেরকে নদীর পাড়ে পাঠিয়ে দেয়া হতো, যে জেলে ছোট মাছ ধরেছেন তাকে নিয়ে আসার জন্য। ঐ সময় টুপা ভাতির মেইন আইটেম ছিলো এই তিনটি, শুটকির সিম (সিদল শুটকি), নদীর ছোট মাছ দিয়ে বিচিডাল (ফরাস বিচি), আর কমলার খোশা দিয়ে নদীর ছোট মাছ, সবকিছুতেই ক্ষেত থেকে তুলে আনা টাটকা ধনিয়া পাতা। রান্না শেষে সবাই গোসল করে এসে পাটি বিছিয়ে, কেউ কেউ পিড়ি নিয়ে বসে, যার যার ঘর থেকে প্লেট-গ্লাস নিয়ে এসে একসাথে খাওয়া।
অতিতে জকিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে এসব আয়োজন পারিবারিক সেতুবন্ধন তৈরীতে বিশাল ভূমিকা পালন করতো। পাশাপাশি সকল বয়সি ছেলে-মেয়েদের আনন্দ উৎসব আর আন্তরিকতা সৃষ্টির অনন্য উপলক্ষে।
জকিগঞ্জে মানব সেবা ফাউন্ডেশন এমন একটি আয়োজন করে আমাকে অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ জানাই আমার সকল ছোট ভাই বোনদের আমাকে নিরলস অতীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শ্রদ্ধা জানাই মালেক স্যারকে যিনি শনিবার আমদের সঙ্গে ছিলেন। চিরতরুন মানুষ মালেক স্যার, আল্লাহতায়ালা যেন সুস্থ রাখেন, এভাবেই প্রাণবন্ত রাখেন সবসময়। আমাদের মিজান অনেক ভালো গান গায়, পরিবেশটাকে সে তার গান দিয়ে মুখরিত করেছিলো, সাথে ছিলো তার বন্ধুরা।সকলকে ধন্যবাদ। জাকিয়া আপা, নীপা দাস, বাবর, দেলোয়ার, তানবীর, জসীমসহ সহ সবার প্রতি অনেক দোয়া। বিশেষ করে মানবসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতি সবসময় শুভ কামনা ও দোয়া রইলো। এই ফাউন্ডেশন বহুদূর এগিয়ে যাক মানবকল্যাণে এই প্রত্যাশা।
লেখক: মানবাধিকার নেত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান : জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, সিলেট।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !