স্টাফ রিপোর্টার
শেষবারের মতো’ তেল-সিঁদুর পরিয়ে, চোখের জলে দুর্গতিনাশীনি মা দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে জকিগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পুজামন্ডপ থেকে দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবীকে শোভাযাত্রা নিয়ে জকিগঞ্জ কাস্টমে কুশিয়ারা নদীর প্রতিমা নিরঞ্জন ঘাটে নিয়ে আসা হয়। হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় একে একে করে মর্তলোক থেকে কৈলাশে বিদায় দেন দুর্গতিনাশীনি মা দেবী দুর্গাকে।
সনাতন ধর্মালম্বীদের এ উৎসবকে ঘিরে মেতে ওঠে সীমান্ত ঘেঁষা কুশিয়ারা নদীপাড়ের নানা ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ। ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনিতে মূখরিত হয় গোটা এলাকা। দেবী দুর্গার বিদায়কে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর ভারত ও বাংলার দুই তীরের বসেছিলো দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। দুই তীরে জড়ো হন হাজারো পূজারী ভক্ত অনুরাগী, দর্শনার্থী ও শুভার্থীরা। হিন্দু, মুসলিমের পদচারনায় মূখরিত হয়ে উঠে জকিগঞ্জ শহরের কাষ্টমঘাট ও ভারতের কাষ্টমঘাটস্থ অখন্ড মন্ডলী মন্দিরের প্রাঙ্গন। মর্তলোক থেকে কৈলাশে দেবীকে বিদায় জানাতে নেচে গেয়ে মাতোয়ারা হন ভক্তরা। সেজেছিলেন উৎসবের বর্ণিল রঙে। কুশিয়ারা নদীর উভয় পারের প্রতিমা বিসর্জনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন ভাবেই বাঙ্গালী হিন্দুদের এ উৎসব ভারত ও বাংলাদেশের কুশিয়ারা নদীর দুই তীর চলে আসছে।
পুজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ জকিগঞ্জের সর্বস্থরের মানুষ। প্রতিমা নিরঞ্জন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ও কাস্টমঘাটে পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সর্তক অবস্থায়। লক্ষ করা গেছে ভারতের করিমগঞ্জেও ভারতীয় বাহিনী সর্তক ছিলো।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কাস্টমঘাটে উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় বিশ্বাসের সঞ্চালনায় এক অনুষ্টান মঞ্চে ভক্ত অনুরাগী, দর্শনার্থী ও শুভার্থীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায়, জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার হোসেন সাগর, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, পুলিশের এএসপি (শিক্ষানবিস) মো. সালাহ উদ্দিন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, বীরমুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী, কসকনকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ময়নুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ জি বাবর, আব্দুর রহমান, কৃষকলীগ সভাপতি আব্দুল আহাদ, সিলেট জেলা পুজা পরিষদের শুভ্রকান্তি চন্দন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের আহবায়ক বিভাকর দেশমূখ্য, আওয়ামীলীগ নেতা শেখ আব্দুল করিম, নূরুল ইসলাম সুহেল, যুবলীগ নেতা এম আজমল হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, জামিল আহমদ, জকিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর রিপন আহমদ, দেলোয়ার হোসেন নজরুল, মাসুদ আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ও ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে অটুট রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !