রহমত আলী হেলালী
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রাম এলাকার রায়গ্রামে এক কৃষকের নামে ৭৬ হাজার ৭শ ২০ টাকার আবাসিক বিদ্যুৎ বিল এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ভূতুড়ে বিল পেয়ে দিশেহারা ওই কৃষক প্রতিকারের জন্য সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জকিগঞ্জ জোনাল অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ওই কৃষকের নাম আব্দুস ছুবহান। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি তিনি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার পান। নতুন সংযোগ পাওয়ার মাত্র ১ মাসের মাথায় চলতি মার্চ মাসে তাদের ৭৬ হাজার ৭শ ২০ টাকার বিল এসেছে বলে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন বিল প্রস্তুতকারী আজিম উদ্দিন। তিনি বলেন এই মিটারে ২১ হাজারের অধিক ইউনিট ব্যবহার হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
গ্রাহক আব্দুস ছুবহানের মেয়ে জেসমিন আক্তার রিমা বলেন, আমাদের ঘরে ২টি বৈদ্যুতিক বাতি ও মোবাইলে চার্জ দেওয়া ছাড়া আর কোন ভাবে বিদ্যুৎ খরচ হয়নি। তারপরও মাত্র এক মাসের মাথায় আমাদের বিদ্যুৎ বিল ৭৬ হাজার ৭শ ২০ টাকা কিভাবে আসে? বিল প্রস্তুতকারী জনৈক আজিম উদ্দিন আমাদের অনেক টাকা বিল এসেছে বলে জানান। পরে স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান রুহুল আমীন আমাদের বাড়িতে আসলে বিগত একমাসের বিদ্যুৎ বিল ৭৬ হাজার ৭শ ২০ টাকা বলে জানান। তবে চলতি মার্চ মাসে সবার ঘরে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ পৌছে দেওয়া হলেও আমাদের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ এখনো দেওয়া হয়নি। মাঝ পথে কিছু অসাধু বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা আমাদের নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জকিগঞ্জ জোনাল অফিসে বিল বিভাগের মন গড়া বানোয়াট সংযুক্ত বিলে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আগের মাসের বিল পরিশোধ করা পরেও পরবর্তী মাসের বিলের সাথে পরিশোধিত বিল সংযুক্ত করে গ্রাহকদের নিকট প্রেরণ করা হয়। ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে আগত গ্রাহকরা ওই বিল পরিশোধ পূর্বক হয়রানির শিকার হতে হয়। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবেদন ছাড়া খুটি স্থানান্তর থেকে শুরু করে কোন কারণে বিদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে লিখিত ছাড়াই টাকার বিনিময় সংযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা।
কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমার দোকান মালিকের নামীয় (আবুল কালাম মিনু) নামের মিটারটি আমি ব্যবহার করে আসছি। মার্চ মাসের বিল প্রতি মাসের মত আমার দোকানে পৌছিয়ে দিলে দেখা যায় এ মাসের আমার বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার ৫শ ৮ টাকা। টাকার পরিমাণ বেশি দেখে সন্দেহ হলে দেখতে পাই নিচে সংক্ষিপ্তভাবে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের বিল অপরিশোধিত উল্লেখ করে একত্রিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার প্রকৃত বিল হলো ২৪৮ টাকা। অথচ আমার বেশ কয়েক বছর পূর্বের পরিশোধিত বিল যোগ করে ৪ হাজার ৫শ ৮ টাকা লিখে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট বাহার উদ্দীন আল রাজী বলেন, একজন কৃষকের ঘরে দু’টি বাতি জ্বালিয়ে কিভাবে এত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে? বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে। জরুরী ভিত্তিতে এর প্রতিকার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অর্ন্তগত জকিগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম সনৎ কুমার বিশ্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বেশ কয়েক মাস থেকে জকিগঞ্জে সফটওয়্যার জনিত কারণে এসব হচ্ছে। কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি। শীঘ্রই বৈঠক করে এসকল সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেব।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !