স্টাফ রিপোর্টার
জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার সংলগ্ন কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রমে কতিপয় লোকের ইন্ধনে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সহ নানা ধরণের জাল পেতে মৎস্য নিধনে নেমেছে একদল দুষ্কৃতিকারী। সরকারি বাঁধা-নিষেধ উপেক্ষা করে নিজেদের নামের সাথে মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন তকমা লাগিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও একদল লোক মৎস্য নিধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জকিগঞ্জ উপজেলার একমাত্র এই অভায়াশ্রম রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী বেশ তৎপর হলেও অপরাধীরা কিছুতেই থামছেনা। কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম কমিটি বৈঠক করে বার বার এদেরকে বাঁধা নিষেধ দিলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রমে অবাধে দেশি মাছ নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। নানা কৌশলে পানি থেকে ছেঁকে তোলা হচ্ছে সবধরনের ছোট বড় মাছ। আর তা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাটেবাজারে। প্রশাসনও বসে নেই। সরেজমিনে গিয়ে জাল আটকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা মৎস্য অফিসার আবু তাহের চৌধুরী কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় পশ্চিম গোটারগ্রামের মৃত সোনা রাম দাসের ছেলে দিপু রাম দাস (৩৫) কে মাছ শিকারের সময় আটক করেন। খবর পেয়ে সরেজমিন গিয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাহিদুল করিম ভ্রাম্যমান আদালতে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এর ৩ (চ) এর ৫ ধারা মতে এক বছরের সাজা প্রদান করেন। তবুও থেমে নেই এ সকল অপরাধীরা। এনিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা সমন্বয় সভায় কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম রক্ষায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কাজলসার ইউপি চেয়ারম্যান ও মৎস্য অভায়াশ্রম রক্ষা কমিটির সভাপতি জুলকারনাইন লস্কর বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কতিপয় প্রভাবশালীর ইন্ধনে কিছু সংখ্যক যুবক সরকারি মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে মাছ নিধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোন ধরনের বাঁধা নিষেধ তারা মানছেনা। একজনকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেওয়ার খবরে তৎপর হয়ে উঠেছে পুরো অপরাধী চক্র। তারা এলাকার একটি হিন্দু পরিবারকে ইন্ধন দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাগণের নিকট পাঠিয়ে ভূল বুঝানোর চেষ্টা করছে। নিজেদেরকে সংখ্যালঘু, মৎস্যজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান পরিচয় দিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে প্রশাসনকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম কমিটির সদস্যদের উল্টো হয়রানির পায়তারায লিপ্ত রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলকে নিয়ে এক সময় প্রবাদ ছিল, "মাছ, বাশ, সুপারি, জকিগঞ্জের বেটাগিরি"। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে জকিগঞ্জ উপজেলা থেকে দেশি প্রজাতির অনেক মাছ হারিয়ে যাচ্ছিল। অগের দিনে এ অঞ্চলে প্রচুর মাছ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অথচ 'মাছ' ছিল জকিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পরিচয়। কিন্তু কিছু অসাধু লোক প্রতি বছরের শুকè মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের নিষিদ্ধ জাল পেতে ও বাঁধ দিয়ে এবং সেচ করে মাছ নিধনের ফলে তা দিনদিন ফুরিয়ে যেতে বসেছিল। অফুরন্ত মাছের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত জকিগঞ্জের হাওড়াঞ্চলসহ নদী-নালা থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল দেশি প্রজাতির অনেক মাছ। এমন এক প্রেক্ষাপটে প্রায় তিন বছর পূর্বে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রমটি করা হয়। যার ফলে এখন পুরো জকিগঞ্জ উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর হয়ে উঠেতে শুরু করেছে। দেশীয় প্রজাতির বোয়াল, শোল, কৈ, মাগুর, কাঙলা, ভেড়া, পাবদা, বাইম, সরপুঁটি, দারকিনা, চান্দা, বাউশ, চিতল, টাকি, ফলি, বোল, রাণী ও আইড় সহ নানা প্রজাতির মাছ এখন উপজেলার বিভিন্ন নদী, নালা, খাল, বিল ও পুকুরে পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলার এই একটিমাত্র মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে উপজেলাবাসী উপকৃত হলেও কতিপয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে তা এখন বিলীন হওয়ার পথে।
এলাকার লোকজন জানান, উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, অভায়াশ্রম কমিটি সহ এলাকাবাসীর কড়া নজরদারির পরও কিছু সংখ্যক লোক অবাধে মৎস্য নিধন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তার উপর মিথ্যা তকমা লাগিয়ে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। মৎস্যজীবী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও সংখ্যালঘু মানুষ পরিচয় দিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করা হয়। এনিয়ে এলাকাবাসী বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। তাই এলাকাবাসী অভায়াশ্রম রক্ষায় প্রশাসনকে আরো জোরালো ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিসার আবু তাহের চৌধুরী বলেন, জকিগঞ্জ থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতি রক্ষায় কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম হয়ে উঠেছিল এক দৃষ্টান্ত। কিন্তু কতিপয় অসাধু লোকের মাছ নিধনের ফলে তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এলাকাবাসী সজাগ থাকলে কোন অপরাধী পার পাবেনা। এ অভায়াশ্রম রক্ষায় প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন, কুলনদী মৎস্য অভায়াশ্রম রক্ষায় প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে। সরকারের এহেন একটি সফল উদ্যোগকে কেউ বিনষ্ট করতে চাইলে আমরা তা হতে দেবনা। এলাকাবাসীকে নিয়ে এই মৎস্য অভায়াশ্রম রক্ষায় আমাদের যা যা করণীয় তা করবো।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !