রহমত আলী হেলালী
গ্রামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে নৌকার ব্যবহার অনেকাংশে কমে এলেও নদী মাতৃক বাংলাদেশে নৌকা এখনও গুরুত্বপূর্ণ বাহন। সিলেট অঞ্চলে চলতি বন্যায় নদী-নালা, খাল-বিল ও এলাকার রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেড়ে গেছে নৌকার কদর। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পূর্ব সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী বাজারে বসেছে সর্ববৃহৎ নৌকার হাট। সাপ্তাহের প্রতি বুধবার নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। স্থানীয়দের মতে, এ হাটটি প্রায় দেড়শত বা তারও অধিক পুরনো হবে। তবে কেউ এর সঠিক ইতিহাস বলতে পারেনি। নৌকা ব্যবসায়ীদের মতে বাংলা সনের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন-এ চার মাস খাল-বিল ও নদ-নদীতে পানি ভরপুর থাকে। তাই এ সময়টাতেই নৌকার হাটে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। চৌধুরী বাজারে নৌকার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি নৌকার পশরা সাজিয়ে বসেছে নৌকার কারিগররা। দুপুর থেকে বিকালের মধ্যেই চৌধুরী বাজারের পার্শ্ববর্তী কুলনদীর এক তীর কানায় কানায় ভরে যায় নৌকায়। আর দরদাম ও দেখেশুনে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের নৌকা। এ হাটে প্রতি বুধবার লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা নৌকার ধরন ও কাঠের ওপর নির্ভর করে ক্রেতাদের কাছে দাম হাঁকছেন। ক্রেতারাও একটু সাশ্রয়ে কেনার জন্য দর কষাকষি করছেন। কথা হয় নৌকার বেপারি (ব্যবসায়ী) জকিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জিয়াপুর গ্রামের রঞ্জিত দাস, কামালপুর গ্রামের বিজয় দাসসহ কয়েকজন নৌকা বেপারি সঙ্গে। তারা সবাই বংশ পরম্পরায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত। রঞ্জিত নৌকায় বসা তার ৮০ বছর বয়সী পিতাকে দেখিয়ে বলেন, আমি ছোটকাল থেকে বাবার সাথে এ বাজারে নৌকা বিক্রি করতে এসেছি। আমার বাবাও ছোটকাল থেকে এ বাজারে এসে নৌকা বিক্রি করতেন। তখন চৌধুরী বাজারে জমজমাট নৌকার হাট বসতো। নৌকার বাজার হিসেবে ‘চৌধুরী বাজার’কে সিলেট অঞ্চলের মানুষ খুব ভালো করে চিনতো। সময়ের ব্যবধানে তা হারিয়ে গেলেও এবারের বন্যায় আবারও যৌবন ফিরে পেয়েছে চৌধুরী বাজারের নৌকার হাট। নৌকার ব্যাপারি লিটন দাস ও মিঠু জানান, জারুল, কড়ই, তুলা ও কৃষ্ণচুরা কাঠের নৌকা হয়ে থাকে। কাঠের ব্যবহার ও আকারের ওপর প্রতিটি নৌকার দাম পড়ে পাঁচ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি নৌকায় তাদের গড়ে ৫০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। উপজেলার কামালপুর থেকে নৌকা বিক্রি করতে আসা মিস্ত্রি অলঙ্গ দাস জানান, কাঠের তক্তা ও লোহা দিয়ে বাড়ি বসে তৈরি করা এক-একটি নৌকার জন্য খরচ হয় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বাজারে ওই নৌকা পাঁচ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। লোহা ও কাঠের মূল্য এবং শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার পর তেমন মুনাফা হয় না। এ সময় বর্ষায় মাছ শিকার ও গবাধি পশুর জন্য নৌকা ক্রয় করতে আসা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা হাকালুকি গ্রামের মতিলাল তার একটি নৌকার দাম হাঁকছিলেন। তিনি জানান, গৃহস্থালি করতে ও গবাদি পশু পালনের জন্য তার নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই তিনি নৌকা কিনতে হাটে এসেছেন। বিয়ানীবাজার থেকে আসা অপর একজন ক্রেতা জানান বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য তিনি নৌকা কিনতে এসেছেন। চৌধুরী বাজারের ইজারাদার হাসানুল আলম হাসনু বলেন, চৌধুরী বাজার থেকে তেমন আয়ের উৎস না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকার হাট বসায় মোটামুটি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে চৌধুরী বাজার নৌকার হাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা ও নৌকার হাট ঘুরে দেখতে আসা উৎসুক জনতার ভিড়ে ভিন্ন রকমের আমেজ তৈরী হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তার মতে, কৃষি কাজ পরিচর্যা, গো খাদ্য সংগ্রহ, মাছ শিকার করা ও যাতায়াতসহ নানান প্রয়োজনে নৌকা অপরিহার্য। যুগ যুগ ধরে ওই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে নৌকা।
গ্রামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে নৌকার ব্যবহার অনেকাংশে কমে এলেও নদী মাতৃক বাংলাদেশে নৌকা এখনও গুরুত্বপূর্ণ বাহন। সিলেট অঞ্চলে চলতি বন্যায় নদী-নালা, খাল-বিল ও এলাকার রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেড়ে গেছে নৌকার কদর। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পূর্ব সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী বাজারে বসেছে সর্ববৃহৎ নৌকার হাট। সাপ্তাহের প্রতি বুধবার নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। স্থানীয়দের মতে, এ হাটটি প্রায় দেড়শত বা তারও অধিক পুরনো হবে। তবে কেউ এর সঠিক ইতিহাস বলতে পারেনি। নৌকা ব্যবসায়ীদের মতে বাংলা সনের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন-এ চার মাস খাল-বিল ও নদ-নদীতে পানি ভরপুর থাকে। তাই এ সময়টাতেই নৌকার হাটে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। চৌধুরী বাজারে নৌকার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি নৌকার পশরা সাজিয়ে বসেছে নৌকার কারিগররা। দুপুর থেকে বিকালের মধ্যেই চৌধুরী বাজারের পার্শ্ববর্তী কুলনদীর এক তীর কানায় কানায় ভরে যায় নৌকায়। আর দরদাম ও দেখেশুনে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের নৌকা। এ হাটে প্রতি বুধবার লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা নৌকার ধরন ও কাঠের ওপর নির্ভর করে ক্রেতাদের কাছে দাম হাঁকছেন। ক্রেতারাও একটু সাশ্রয়ে কেনার জন্য দর কষাকষি করছেন। কথা হয় নৌকার বেপারি (ব্যবসায়ী) জকিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জিয়াপুর গ্রামের রঞ্জিত দাস, কামালপুর গ্রামের বিজয় দাসসহ কয়েকজন নৌকা বেপারি সঙ্গে। তারা সবাই বংশ পরম্পরায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত। রঞ্জিত নৌকায় বসা তার ৮০ বছর বয়সী পিতাকে দেখিয়ে বলেন, আমি ছোটকাল থেকে বাবার সাথে এ বাজারে নৌকা বিক্রি করতে এসেছি। আমার বাবাও ছোটকাল থেকে এ বাজারে এসে নৌকা বিক্রি করতেন। তখন চৌধুরী বাজারে জমজমাট নৌকার হাট বসতো। নৌকার বাজার হিসেবে ‘চৌধুরী বাজার’কে সিলেট অঞ্চলের মানুষ খুব ভালো করে চিনতো। সময়ের ব্যবধানে তা হারিয়ে গেলেও এবারের বন্যায় আবারও যৌবন ফিরে পেয়েছে চৌধুরী বাজারের নৌকার হাট। নৌকার ব্যাপারি লিটন দাস ও মিঠু জানান, জারুল, কড়ই, তুলা ও কৃষ্ণচুরা কাঠের নৌকা হয়ে থাকে। কাঠের ব্যবহার ও আকারের ওপর প্রতিটি নৌকার দাম পড়ে পাঁচ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি নৌকায় তাদের গড়ে ৫০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। উপজেলার কামালপুর থেকে নৌকা বিক্রি করতে আসা মিস্ত্রি অলঙ্গ দাস জানান, কাঠের তক্তা ও লোহা দিয়ে বাড়ি বসে তৈরি করা এক-একটি নৌকার জন্য খরচ হয় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বাজারে ওই নৌকা পাঁচ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। লোহা ও কাঠের মূল্য এবং শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার পর তেমন মুনাফা হয় না। এ সময় বর্ষায় মাছ শিকার ও গবাধি পশুর জন্য নৌকা ক্রয় করতে আসা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা হাকালুকি গ্রামের মতিলাল তার একটি নৌকার দাম হাঁকছিলেন। তিনি জানান, গৃহস্থালি করতে ও গবাদি পশু পালনের জন্য তার নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই তিনি নৌকা কিনতে হাটে এসেছেন। বিয়ানীবাজার থেকে আসা অপর একজন ক্রেতা জানান বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য তিনি নৌকা কিনতে এসেছেন। চৌধুরী বাজারের ইজারাদার হাসানুল আলম হাসনু বলেন, চৌধুরী বাজার থেকে তেমন আয়ের উৎস না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকার হাট বসায় মোটামুটি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে চৌধুরী বাজার নৌকার হাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা ও নৌকার হাট ঘুরে দেখতে আসা উৎসুক জনতার ভিড়ে ভিন্ন রকমের আমেজ তৈরী হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তার মতে, কৃষি কাজ পরিচর্যা, গো খাদ্য সংগ্রহ, মাছ শিকার করা ও যাতায়াতসহ নানান প্রয়োজনে নৌকা অপরিহার্য। যুগ যুগ ধরে ওই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে নৌকা।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !