
জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ আল-ফারুক একাডেমী একযুগ থেকে বন্ধ থাকায় সবুজ নার্সারীতে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হওয়া একাডেমীর ছাত্র/ছাত্রীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখা-পড়া করলেও আজ পর্যন্ত চালু হয়নি আল-ফারুক একাডেমী। এলাকাবাসীর কঠোর পরিশ্রমে তৈরী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে বন্ধ থাকায় শ্রেণী কক্ষ, দরজা-জানালা, ডেক্স-ব্রেঞ্চ ও আসবাবপত্রগুলো ভেঙ্গে এলোমেলো হয়ে আছে। কেউ কেউ ভাঙ্গা দরজা-জানালা, ডেক্স-ব্রেঞ্চ ও আসবাবপত্র দিয়ে গৃহস্থালির কাজ করছেন। শ্রেণী কক্ষের ভিতরে মাকরসার জাল আর বাইরের লতাপাতা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে। একাডেমীর ভবনটি এখন জমি দাতার নার্সারীর গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আধাপাকা একাডেমী ভবন যে কোন সময় ধ্বসে পড়ে যেতে পারে। একাডেমীর মাঠ নার্সারীর কাজে ব্যবহার করছেন জমি দাতার পরিবার। একাডেমীর এই বেহাল অবস্থার জন্য অর্থনৈতিক দূরাবস্থা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। একাডেমীর প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য চিনিরচক গ্রামের জামাল উদ্দিন লস্কর জানান, কসকনকপুর ইউনিয়নের চিনিরচক, আইয়র, লক্ষিরায়ের চক, বলরামের চক, উত্তর আইয়র, মৌলভীরচক, নয়াগ্রাম, বিন্দরচক ও বিয়াবাইল গ্রামের ছাত্র/ছাত্রীদের মাধ্যমিক শিক্ষার সুবিধার্থে ১৯৯৮ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় হাজিগঞ্জ আল-ফারুক একাডেমী যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৯ সালের শুরু থেকে ৩জন শিক্ষক ও প্রায় অর্ধ শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে ষষ্ট শ্রেণীর কার্যক্রম শুরু হয়। পরের বছর ২০০০ সালে
একাডেমীতে সপ্তম শ্রেণী খুলা হলে জমজমাট হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পরের বছর অষ্টম শ্রেণী খুলতে গিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে কোন ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ফলে ২০০৪ সালের দিকে অর্থনৈতিক টানাপোড়নে পড়ে আল-ফারুক একাডেমী। শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন-ভাতা না দিতে পারায় একাডেমী ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন এক এক করে সকল শিক্ষক। এ থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে বহুল কাংঙ্খিত হাজিগঞ্জ আল-ফারুক একাডেমী। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে একাডেমীর একটি ম্যানেজিং কমিটি ছিল। সে কমিটির এখন অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে একাডেমী ভবন ও মাঠ জমি দাতা পরিবারের দখলে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে একাডেমীর জমি দাতার ভাই সলু মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে আমি ভুমি ছেড়ে দেব। বেকার পড়ে আছে তাই আমি নার্সারী করেছি। এ প্রসঙ্গে চিনিরচক গ্রামের উদীয়মান সমাজকর্মী মাহতাব আহমদ লস্কর বলেন, হাজিগঞ্জ আল-ফারুক একাডেমী ছিল আমাদের আশার আলো। এ প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে এলাকার ছাত্র/ছাত্রীরা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেখা-পড়া করতে হতোনা। ঝড়-বৃষ্টির দিনে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের ছাত্র/ছাত্রীরা ৪/৫ কিলোমিটার দূরে মুন্সিবাজার কিংবা ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে লেখা-পড়া করতে হয়। এদিক বিবেচনায় নিজেদের উদ্যোগে একাডেমীর মাঠে বাঁশ ও টিন দিয়ে একটি ঘর তৈরী করে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়ে এলাকায় আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, একাডেমী পুনরায় চালু করতে হলে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো নিশ্চিতের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এ বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য বিরোধীদলীয় হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন সাহেবের নিকট আবেদন করেছি। তিনি একাডেমী পুনরায় চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !