বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন শীতের প্রচন্ড দাপট শুরু হয়েছে। প্রকৃতিতে হিমশীতল বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। দেশজুড়ে বইছে হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমে আসছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা দ্রুত নেমে আসায় শীতের ছোবলে জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে দিনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সূর্য, রাতে হালকা বৃষ্টির মতো কুয়াশায় মানুষ, পশুপাখি ও প্রাণিকুল জড়সড় হয়ে গেছে। সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা পাওয়া ভার। শীতের শুভ্রতায় ছেয়ে গেছে সব প্রকৃতি। পানির মতো ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে শিশির বিন্দু। পথঘাট, মাঠ-প্রান্তর, গাছপালা ভিজে একাকার হয়ে গেছে। শিশির সিক্ত গাছগুলো দেখে মনে হয় যেন গোসল করেছে। শীতল বাতাসের ঝাপটায় চোঁখ দিয়ে পানি ঝরে। একটা উদাস সুর বাজে প্রকৃতিতে। শীতের প্রকৃতিকে মনে হয় ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃতি। সারা দেশের ন্যায় জকিগঞ্জেও কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায় হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, দুস্থ, ভবঘুওে ও অভাবীদের দুঃখকষ্টের সীমা নেই। আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকেই শীতের গরম কাপড় কিনতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় তারা চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অসহায় শীতার্ত মানুষ কাগজ, পাতা ও খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রচন্ড শীতের কারণে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ কাজ করতে না পারায় তাদের আয় রোজগার কমে গেছে। অনাহারে-অর্ধাহারে অতিকষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন তারা। বৈরী শীতের কারণে কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, মোড় ও খেলার মাঠে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। মানুষ বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। দুর্বিষহ শীতের ছোবলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। শীতার্ত লোকজন শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। শীতের হিংস্র ছোবলে মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা। শীতকালীন ভাইরাসজনিত সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, মেনিনজাইটিস প্রভৃতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার শীতের মাত্রা আগের তুলনায় জকিগঞ্জ উপজেলায় বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাই শীতকবলিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। মানবিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অভাবী মানুষের শীতবস্ত্রের অভাব মোচনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিত্তবান, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক সবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সম্মিলিত উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায় পরিত্রাণ পেতে পারে অগণিত শীতার্ত প্রাণ। আপনার ফেলে রাখা অব্যবহৃত কাপড়টি আপনার মতোই একজন মানুষকে বাঁচাতে পারে শীতের মরণ ছোবল থেকে। তাই আসুন শীতার্ত মানুষের পাশে হাত বাড়াই একসঙ্গে।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !