জাহানারা চৌধুরী ঝর্ণা
জকিগঞ্জ থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলা। এখন আর উপজেলার কোন গ্রামে দেখা যায়না এসব খেলা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় সেই খেলাগুলো। হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী খেলা নিয়ে ইতিপূর্বে পৃথকভাবে জকিগঞ্জ সংবাদে লিখা হয়েছে। তবুও গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া দাড়িয়াবান্দা, এক্কা-দোক্কা, কুস্তি, সাতার-ডোব, কানামাছি, বিস্কুট দৌড়, দড়ি লাফ, লুডু, বৌচি, ওপেন্টি বায়োস্কোপ এমন শতাধিক খেলার কথা ফুটে উঠেনি। জানা যায়, এ সকল খেলা এক সময় জকিগঞ্জের সবর্ত্র খুবই জনপ্রিয় ছিল। কালের বিবর্তনে ওই সব খেলাই হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে। এখনকার সময়ের অনেক তরুণ জানে না ওই খেলাগুলো কী বা কিভাবে খেলা হতো। গ্রামে থাকা তরুণদের এখন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার নিয়ে ছোটাছুটির পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আগে প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে, স্কুলের মাঠে, বাড়ির পাশের খালি জমিতে শিশু-কিশোররা এসব খেলা খেলতো। তখন বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে নানাবাড়ী, খালারবাড়ী ও ফুফুরবাড়ীতে গিয়ে উঠানে, ঘরের পিছে বা কখনও কখনও মাঠে গিয়েও এসব খেলা চলতো। নানা বাড়িতে এসব খেলার মজাটা ছিল ভিন্ন। মামাতো ও খালাতো ভাই-বোনদের নিয়ে খেলা চলতো পুরোদিন। কিন্তু দিন বদলের পালায় আর পালা বদলের হাওয়ায় এসব খেলা এখন নেই বললেই চলে। কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ। উচ্ছল শিশু-কিশোরদের মুখে এমন ডাকটি এখন আর সচরাচর তেমন শোনা যায় না। দেখা যায় না শিশু-কিশোরদের দলবদ্ধ হয়ে দাড়িয়াবান্দা, এক্কা-দোক্কা, কুস্তি, সাতার-ডোব, কানামাছি, বিস্কুট দৌড়, দড়ি লাফ, লুডু, ওপেন্টি বায়োস্কোপ লুকোচুরি কিংবা মজার খেলা বউচি খেলতে। গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাগুলো ক্রমশ:ই হারিয়ে যেতে বসেছে। আজকের সময়ের যুবক-যুবতিদের অনেকে বলেন, এমন একটা সময় গেছে, যখন চারিদিকে ছিল খোলা মাঠ, সবুজ বৃক্ষের ছড়াছড়ি। সবকিছু মিলিয়ে অন্য রকম মনোরম পরিবেশ। সে সময়ে আমাদের মতো শিশু-কিশোররা কখন স্কুল ছুটি হবে সে ফাঁক টুকু খুজতো। স্কুল ছুটি হলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে সহপাঠিদের নিয়ে দল-বেধে ছুটে চলতো মাঠের পানে। কিংবা কারো বাড়ির উঠোনে। চলতো দল বেঁধে লুকোচুরি, এক্কা-দোক্কা কিংবা মজার খেলা বউচি। সে সময় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাা যখন এ খেলায় মেতে উঠতো তখন তাদের বাবা মা কিংবা আত্মীয় স্বজনরাও মাঝে মাঝে ওদের দলে ভিড়ে যেতো। ছোটদের পথে বড়রাও আনন্দ উচ্ছাসে মেতে উঠতো। কিন্তু এখন? এখন আর সেই আগেকার মত কানামাছি, বৌচি খেলায়ও আগ্রহ নেই কিশোর-কিশোরীদের। আগের দিনে এ সকল খেলার প্রতিযোগিতায় সেরাদের জন্য থাকত শিল্ড, কাপ ও টেলিভিশন পুরস্কার হিসেবে। বর্তমানে শিল্ড তো পুরোপুরি হারিয়েই গেছে। তখন ‘লুডু খেলা ছিল গ্রামের একটি প্রিয় খেলা। অবসর সময়ে ছোট-বড়, গৃহবধূসহ সবাই এ খেলাটি খেলতেন। বৃষ্টি নামলে লুডু খেলার পাশাপাশি ধুম পড়ত মুড়ি খই মিঠাই খাওয়ার। আজ নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো ইতিহাস কিংবা রূপকথার গল্পের মতো শুনাবে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে সবকিছুতেই এসেছে অমূল পরিবর্তন। এখন ঐ সকল খেলার বদলে ছেলে মেয়েরা আকৃষ্ট হচ্ছে আকাশ সংস্কৃতিতে। এখন ছেলে মেয়েদের হাতে উঠে এসেছে ভিডিও গেমস, মোবাইল, টেলিভিশন ও ফেসবুক। ফলে এখন আর আগের মতো শিশু-কিশোরদের দাড়িয়াবান্দা, এক্কা-দোক্কা, কুস্তি, সাতার-ডোব, কানামাছি, বিস্কুট দৌড়, দড়ি লাফ, লুডু, ওপেন্টি বায়োস্কোপ কিংবা মজার খেলা বউচি খেলায় মেতে উঠতে দেখা যায় না। তবে জকিগঞ্জের সচেতন মহল মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ সকল ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !