রহমত আলী হেলালী
জকিগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পলাতক জীবন-যাপনের ফলে অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকুরী হারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একই সাথে তাদের পরিবার-পরিজন সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা অর্থনৈতিক কষ্টের পাশাপাশি পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। অনেক নেতা একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে পরিবার-পরিজনকে বাড়িতে রেখে মাসের পর মাস পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ দিনের বেলা বাড়িতে থাকলেও রাতে গিয়ে থাকছেন অন্যত্র কারো বাড়িতে। এতে করে তাদের সন্তানদের লেখা-পড়াও দারুণ ভাবে বিঘœ ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া থাকলেও থানায় কোন রাজনৈতিক মামলা হলে আসামীর তালিকা থেকে বাদ পড়ছেননা তারা। কোথাও গাড়ী ভাঙ্গা বা পোড়ানো হলে বিএনপি-জামায়াতের পলাতক নেতা কর্মীরা মামলায় আসামী হয়ে যান। ফলে জকিগঞ্জের বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতার মোবাইল নম্বরে এখন কল ঢুকছে না। নেতারা সকালে এক নম্বর ব্যবহার করলেও দুপুরে ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করছেন। রাতে বন্ধ থাকে বেশির ভাগ নেতার মোবাইল নম্বর। জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি বিকালে গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচী পালনের লক্ষ্যে জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা পৌর শহরের মিছিল বের করে। মিছিলের এক পর্যায়ে তারা রাস্তায় রাখা একটি পুলিশী ভ্যান ভ্ঙ্গাচুর শুরু করে। এতে পুলিশ মারমুখী হয়ে উঠলে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এসময় পুলিশ প্রায় ৬৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মোঃ হুমায়ন কবীর বাদী হয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৫৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখপূর্বক একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০১, তারিখ ০৫/০১/২০১৫ইং। এ মামলায় আরও ১৫০/১৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতকর্মীরা জানান, পুলিশ এ মামলায় এজাহার নামীয় ৩/৪ জন আসামীকে আটক করলেও প্রতিনিয়ত সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের নিরীহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০/২৫ জন নেতাকর্মীকে সন্দিগ্ধ আসামী করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এ কারণে এজাহারভুক্ত আসামী ছাড়াও শতশত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি রাতে জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নের নওয়াগ্রাম নামকস্থানে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গাড়ীর ড্রাইভার দুলাল আহমদ বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। জকিগঞ্জ থানার মামলা নং ০২, তারিখ ০৭/০১/২০১৫ইং। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে আরও ২০/২২জনকে। এ মামলা নিয়ে শুরু থেকেই এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ.রশীদ বাহাদুরসহ এলাকার বিপূল সংখ্যক জন সাধারন জানান, এ মামলার আসামীরা একটি প্রভাবশালী মহলের প্রতিহিংসার শিকার। এজাহারনামীয় আসামীদের অনেকের এ ঘটনার সাথে নুন্যতম সম্পৃক্ততা নেই। তবুও পুলিশ এ মামলার এজাহার নামীয় ১নং আসামী হিফজুর রহমান হিজনকে গ্রেফতার করেছে। এজাহারনামীয় বাকি আসামীরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকলেও সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে বাদ পড়েননি অনেক নিরীহ মানুষ। গ্রেফতার এড়াতে সিলেট নগরীতে অবস্থানরত একাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের সাথে আতাতের মাধ্যমে কতিপয় বিএনপি নামধারীরা এলাকায় থাকলেও মাঠ পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। এজাহারনামীয় আসামী ছাড়াও পুলিশ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তালিকা করে প্রতিনিয়ত সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের ফলে কেউ-ই নিরাপদে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা কে কোথায় রয়েছে তাও অনেকের কাছে অজানা। স্থানীয়রা জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা বর্তমানে মাঠ ছেড়ে গাঁ বাঁচাতেই বেশী ব্যস্ত রয়েছে। জকিগঞ্জ এখন অনেকটা বিরোধী জোটহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া চলমান আন্দোলন শুরুর পর থেকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় জকিগঞ্জ বিএনপি-জামায়াতের সরকার বিরোধী আন্দোলনে ভাটা পরেছে। বর্তমানে জকিগঞ্জের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। নামে মাত্র হরতাল-অবরোধ থাকলেও তাও ভুলতে বসেছে এ উপজেলার মানুষ।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !