টানা অবরোধের ৩৩তম দিন অতিক্রান্ত হলো ৭ ফেব্র“য়ারী ২০১৫ তারিখে। এই ৩৩ দিনে অর্ধশতাধিক জনের প্রাণহানি ঘটেছে সহিংসতা-নাশকতায়। সহস্রাধিক যানবাহনে আগুন দেয়া ও ভাংচুর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে এখনো অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দফায় দফায় রেলে চালানো হয়েছে নাশকতা। এর পাশাপাশি অর্থনীতি, শিক্ষাসহ নানা খাতে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র কতটা ইতোমধ্যে স্ফীত হয়েছে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নি¯প্রয়োজন। ২০দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কোনো চাপের কাছেই নতিস্বীকার করা হবে না, আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আমরা পুনর্বার আহ্বান জানাই-গণতান্ত্রিক পন্থায় নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন, সহিংসতা-নাশকতার আগুন নেভান, অবরোধ-হরতালের বিকল্প কর্মসূচি খুঁজুন, মানুষকে স্বস্তি-শান্তি-নিরাপত্তা দিন। আর কত জীবন পুড়ে অঙ্গার হবে, আর কত সম্পদ ধ্বংস হবে? স্বীকার না করে উপায় নেই যে, বিগত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে যে অবস্থা বিরাজ করছে তা অত্যন্ত গুরুতর। রাজনৈতিক অচলাবস্থা যে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তাতে জনজীবনের শান্তি-স্বস্তি সব হারিয়ে গেছে। নাশকতা-সহিংসতার আগুনে পুড়ে যাচ্ছে দেশ-জাতির সব স্বপ্ন-সম্ভাবনা। আতঙ্ক ও শঙ্কা মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। জীবন-জীবিকাসহ সব কিছু পড়েছে চরম হুমকির মুখে। বিদ্যমান উৎকট পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান না হলেও আমরা আশা করতে চাই, সবার মধ্যে উদয় হবে শুভবুদ্ধির এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সবাই দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবেন। এমন পরিস্থিতিকে অবশ্যই নিয়তি নির্ধারিত কোনো বিষয় বলে মেনে নেয়ার কারণ নেই। এর দায় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কম-বেশি সবার। মানবতার এমন পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বন্ধ হোক ধ্বংসযজ্ঞ। অনাকাংখিত-অস্বাভাবিক মৃত্যু থামাও এই আবেদন-নিবেদন-আকুতি জানাতে জানাতে শুভবোধ সম্পন্ন সব মানুষ ক্লান্ত। রাজনীতি ও আন্দোলনের নামে দুঃসহ ও নৈরাজ্যকর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এর নিরসন ঘটাতে হবে রাজনীতিকদেরই। রাজনীতির ওপর থেকে যাতে মানুষের আস্থা চলে না যায় তাও নিশ্চিত করতে হবে দেশ-জাতির জরুরি প্রয়োজনেই। যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই হবে। মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। ভীতিকর রাজনীতি মেনে নেয়া যায় না। সরকার ও আন্দোলনকারী পক্ষকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখনো সময় আছে। এখন পর্যন্ত যা গেছে এর হিসাব মেলানো যাবে না। সভ্যতা-মানবতার কলঙ্ক ঘোচান। মানুষের আর্তনাদ আমলে নিন। মানুষ শুধু শান্তি ও স্বস্তি চায়। গণমানুষের এই চাওয়া খুব সঙ্গত ও স্বাভাবিক।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !