জাহানারা চৌধুরী ঝর্ণা
জকিগঞ্জের জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে হা-ডু-ডু ছিল এক সময় বেশ জনপ্রিয়। অথচ এখন সে খেলা তেমন আর চোঁখে পড়েনা। এখন বিভিন্ন আধুনিক খেলার চাঁপে এ খেলা হারাতে বসেছে সেই জনপ্রিয়তা। নব্বইয়ের দশকে খোলা মাঠে কিংবা ধানকাটা বিলে এসবের আসর জমতো জমজমাট। জোছনা রাতে জকিগঞ্জের প্রত্যান্ত অঞ্চলের ছেলেরা এ খেলায় মেতে থাকতেন। জানা যায়, হা-ডু-ডু অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজ, সরল, উত্তেজনাপূর্ণ আনন্দময় চিরায়ত গ্রামীণ খেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লাবণ্যে ভরা গ্রামের আনাচে-কানাচে একটু ফাঁকা মাঠ কিংবা খোলা জায়গা পেলেই এ খেলার আয়োজন করার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতো হাজারো মানুষ। হা-ডু-ডু খেলায় ব্যায় বহুল ক্রীড়া সরঞ্জাম কিংবা বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে না। তাই হা-ডু-ডু খেলার প্রচলন দেশের প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে চোঁখে পড়ার মতো ছিল। গ্রামাঞ্চলে খেলাটি অধিকতর জনপ্রিয় হওয়ায় তখন হা-ডু-ডু কে গ্রাম বাংলার খেলাও বলা হতো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হা-ডু-ডু কে কাবাডি নামকরণ করা হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় খেলার গৌরবজনক মর্যাদা দেওয়া হয়। আজও গ্রামাঞ্চলে মাঝে মধ্যে এ খেলার আয়োজন করলে পাড়া-গায়ের সকল শ্রেণী পেশার সব বয়সের মানুষ প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আনন্দের সাথে তা উপভোগ করেন। জকিগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় এক সময় এ খেলার পরতে পরতে মিশে ছিল-প্রাণচঞ্চলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা আর নিবিড় সেতু বন্ধন। তাই জকিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি মানুষের জীবন দর্শনে কাবাডি বা হা-ডু-ডু একাকার হয়ে মিশে আছে। তবে বছরের পর বছর অবহেলা আর উদাসীনতার জন্য এ উপজেলার ক্রীড়াঙ্গনে কাবাডি বা হা-ডু-ডু’র স্থান শূন্যের কোটায়। কিছুদিন আগে গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত কাবাডি বা হা-ডু-ডু খেলা দেখা গেলেও এখন তা নিয়মিত হচ্ছে না। এ খেলার নিয়ম ছিল ১২.৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের আয়তকার মাঠ তৈরী করে প্রতি দলে ১২ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে দু’টি দলে ভাগ করা। এই খেলায় এক পক্ষের খেলোয়াড় দম ধরে হা-ডু-ডু বলে প্রতিপক্ষের কোটায় হানা দিয়ে দম থাকা অবস্থায় ফিরে আসা। প্রতিদলে ১২ জন করে খেলোয়াড় থাকলেও ৭জন খেলোয়াড় কোটায় থাকে এবং বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে অবস্থান নেয়। খেলায় দুই অর্ধ মিলিয়ে ৪০ মিনিট এবং মাঝামাঝি সময়ে ৫ মিনিটের বিরতি থাকে। কোন পক্ষ তার বিপক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আউট করার সুবাদে একটি করে পয়েন্ট লাভ করে। বিপক্ষ দলের সমস্ত খেলোয়াড়কে আউট করতে পারলে লোনা বাবদ অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট পায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে দল বেশি পয়েন্ট অর্জন করবে খেলায় সেই দল জয়ী হবে। তবে জকিগঞ্জে হা-ডু-ডু খেলায় সঠিকভাবে এ নিয়ম মানা হতো না। অনেক সময় আয়োজকরা দু’দলে ভাগ করতে পারলেই এ খেলা শুরু করে দিতেন। সচেতন মহলের অনেকে মনে করেন, কাবাডি বা হা-ডু-ডু আমাদের নিজস্ব খেলা হিসেবে এক সময় দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। তাই খেলাটিকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু খেলাটিতে এখন পর্যন্ত মানুষ আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। তাই জৌলুস হারিয়েছে খেলাটি। অতীত নিকটে কাবাডিতে দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে বাংলাদেশই ছিল সেরা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই শ্রেষ্টত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে কাবাডি বা হা-ডু-ডু খেলার যথোপযুক্ত সংরক্ষণ প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কিংবা স্কুল-কলেজে এ খেলার প্রচলন করা খুব জরুরী। বিভিন্ন খেলার পাশাপাশি এ খেলাকে প্রধান্য দিলে হারিয়ে যাওয়া স্বকীয়তা ফিরে পাবে বলে তারা মনে করেন।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !