স্টাফ রিপোর্টার
বর্ষার সিক্ত বসুন্ধরা বৈচিত্রময় পৃথিবীকে নতুন রুপে সাজায়। পত্র-পল্লবে, ফুলে-ফলে প্রফুল্লিত এক নতুন প্রকৃতিকে সে তুলে দেয় শরতের বরণ ডালায়। দূর আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ বাসে। মৃদু বাতাসে স্মতি হাসে কাশফুল। শিউলীর শরীরে জাগে শিহরণ। ঐ দূরে বেজে ওঠে ঢাক। দরজায় কড়ানাড়ে দূর্গোৎসব। মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জকিগঞ্জে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। এবার দেবীর আগমন নৌকায় আর গমন দোলায়। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার; এই চেতনার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। জকিগঞ্জ উপজেলার সকল প্রান্তের মানুষ ৪ দিন ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যুক্ত এই আনন্দ আয়োজনে। মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে পূজা পরিদর্শন করছেন দর্শনার্থীরা। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিন মঙ্গলবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস; ষষ্ঠী তিথিতে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং সায়ংকালে বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। সেই সঙ্গে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব। পরদিন বুধবার মহাসপ্তমী এবং বৃহস্পতিবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। তিথি অনুযায়ী শুক্রবার একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জকিগঞ্জে ঐদিন বিজয়া শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পূজামন্ডম পরিদর্শনে এবার সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবীর, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাপার কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব শাব্বীর আহমদকে দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের মধ্যে বর্তমান এমপি সেলিম উদ্দিন ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবীর জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী সফর সঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এখনও ফিরেননি। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদী আরবে অবস্থান করছেন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাব্বীর আহমদ ব্যাবসায়িক কারণে কয়েক মাস থেকে ফ্রান্স অবস্থান করছেন। তবে এবার পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও যুগ্ম আহবায়ক সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন নিশ্চিত করতে মন্দির ও আশপাশের এলাকায় জকিগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। উৎসব উপলক্ষে জকিগঞ্জের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মন্দিরগুলোতে দেখা যায় সাজ সাজ রব। এবার জকিগঞ্জের ১০২ টি মন্ডপে উৎসব মূখর পরিবেশে পূজা অর্চনা করেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। এর মধ্যে বারহাল ইউনিয়নে ৬টি, বীরশ্রী ইউনিয়নে ১৮টি, কাজলসার ইউনিয়নে ১১টি, খলাছড়া ইউনিয়নে ১৩টি, জকিগঞ্জ ইউনিয়নে ৪টি, সুলতানপুর ইউনিয়নে ১০টি, বারঠাকুরী ইউনিয়নে ১৪টি, কসকনকপুর ইউনিয়নে ৬টি, মানিকপুর ইউনিয়নে ১৬টি ও জকিগঞ্জ পৌরসভায় ৩টি পূজা মন্ডপ রয়েছে। এ সকল মন্ডমের মধ্যে দর্শণার্থীদের ভিড় দেখা গেছে বিরশ্রী ইউনিয়নের উত্তর বিপক গ্রামের অধির বিশ্বাসের বাড়ীতে তৈরী সার্বজনীন পূজা মন্ডপে। এখানে ১০০টি হাত দিয়ে তৈরী করা হয় একটি প্রতিমা। জকিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নীলমনি রায় ও সঞ্জয় চন্দ্র নাথ সুষ্টভাবে সার্বজনীন দূর্গোৎসব পালন করতে সকলের সহযোগিতার জন্য জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !