
অভাবের তাড়নায় ১৩-১৪ বছর বয়সী মেয়ে পারুলকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের ঢাকাস্থ বাসায় কাজ করতে দিয়েছিলেন জকিগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামের দিনমজুর বলু মিয়ার স্ত্রী এলজিইডির এমএলএসএস রুশনা বেগম। সেখান থেকে আট মাস আগে হারিয়ে গেলে আজও মেয়েটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রুশনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “ চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে জকিগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন ভূঁইয়া তাঁর বাসায় কাজের জন্য আমার মেয়েকে নেন। পারুল মার্চে আমাকে পিআইও কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। তখন আমি আমার মেয়েকে আর না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ২০ মার্চ আমাকে না জানিয়ে পারুলের ইচ্ছা বিরুদ্ধে জোর পূর্বক জকিগঞ্জ থেকে তাকে ঢাকার বাসায় পিআইও নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী পারুলের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। খবর পেয়ে আমি মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য সেখানে গেলে আমার সাথে চরম দূর্ব্যবহার করে বাসার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কিছুদিন পর পিআইও শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া আমাকে জানান, পারুল বাসার নীচে যাচ্ছে বলে কোথায় চলে গেছে। খুজাখুজি করে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। এরপরও খোঁজ নিয়ে দেখতেছি সে কোথায় গেছে। তার এই কথা শুনে আমি প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করি। তখন কোন ধরণের উল্টাপাল্টা কথা না বলে চেয়েছি কৌশলে আমার মেয়েকে ফেরত নিয়ে আসতে। কিন্তু দিনের পর দিন আর মাসের পর মাস চলে গেলেও তিনি আর আমার মেয়েকে ফেরত দেননি। বরং মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি উল্টাপাল্টা কথা ও গালিগালাজ করেন। এ অবস্থায় নিজের সন্তান হারিয়ে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর দরবারে হাটাঁহাটি করে কোন পথ পাইনি। পরবর্তীতে উপায়ন্তর হয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহাদৎ হোসেন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী লায়লা বেগমের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৪ জুলাই জকিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করি। আদালত অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করে জকিগঞ্জ থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে আর কি হলো তা জানিনা। তবে বর্তমানে মামলা তুলে নেয়ার জন্য পিআইও টাকার লোভ দেখাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমি টাকা চাইনা শুধু আমার মেয়েকে ফেরত চাই। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশের পরই গত ২১ জুলাই মামলাটি এফআইআর করা হয়। মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। পিআইও ষ্টেশনে না থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকায় গিয়ে খুঁজ নিয়ে দেখি সে পূর্বের বাসা ছেড়ে চলে গেছে। অভিযুক্ত পিআইও শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া পারুলকে অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাকে আমি আমার বাসায় কাজের জন্য নিয়েছিলাম। সেখান থেকে কোথায় চলে গেছে। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ নিয়ে এবং মাইকিং করে তাকে না পেয়ে আমি থানায় জিডি করে রেখেছি। তিনি বলেন, বাদীর মামলা চালানোর মত সামর্থ নাই। স্থানীয় কিছু লোকের ইঙ্গিতে সে মামলা দিয়েছে।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !