জাহানারা চৌধুরী ঝর্ণা
ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অনেক কিছুই আজ ভিড় জমিয়েছে ভার্চুয়াল জগতে। এর বাইরে নেই আমাদের অমলিন আর মাহামিলনের ঈদ অভিবাদনও। কিছুক্ষণ পর পরই বেজে উঠছে মোবাইলের মেসেজ টোন। ই-মেইলের ইন বক্সে জমতে শুরু করেছে চাঁদ-মিনার কিংবা ক্যালিগ্রাফির ছবিময় ঈদ শুভেচ্ছা। ফেসবুক, টুইটার কিংবা গুগল প্লাস এর মতো জনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে ঈদ শুভেচ্ছার বৈচিত্রময় সব স্ট্যাটাস। এর বেশির ভাগই সচিত্র। কোনও কোনওটিতে আবার যুক্ত করা হয়েছে ঈদের জাতীয় সঙ্গীত খ্যাত ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানের লিংক অথবা রিদম। ফলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে আজ একেবারেই কমে গেছে ঈদ কার্ডের ব্যবহার। বলতে গেলে পোস্টকার্ড সাইজের কাগজে ছাপা ঈদ কার্ড এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। কমে গেছে মিউজিক ঈদ কার্ডের ব্যবহারও। আবহমান সংস্কৃতির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে তার-বেতার সংযোগ। সেলফোন থেকে এসএমএস, এমএমএস পাঠিয়ে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-মেইলে ই-কার্ড, ভি-কার্ড পাঠিয়ে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ছেলে-বুড়ো সবাই। বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে আজকের তরুণ-তরুণীরা। ঈদকে সামনে রেখে জকিগঞ্জের বিভিন্ন গিফটের দোকানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গিফটের দোকানগুলো ঘুরে ঈদ কার্ড চোঁখে পড়েনি। ২/৪টি দোকানে ঈদ কার্ড দেখা গেলেও তাতে ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারের একটি গিফটের দোকানে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা ঈদ শুভেচ্ছা হিসাবে কিনছেন বিভিন্ন গিফট আইটেম। গিফট কিনতে আসা এমনি এক ক্রেতা ফারজানা বললেন, এখন আর ঈদ কার্ড কেনার কোন প্রয়োজন নেই। ঈদ কার্ডের পরিবর্তে মোবাইল মেসেজ আর ফেবুকেই সব বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিব। অযথা কাগজের কার্ড কিনে কি লাভ? কাছের বন্ধুদের কিছু গিফট দেব বলেই এখানে এসেছি। উপজেলার জকিগঞ্জ বাজার, বাবুর বাজার, শরীফগঞ্জ বাজার, মুন্সিবাজার, শাহগলী বাজার, ঈদগাহ বাজার, চৌধুরী বাজার ও লক্ষিবাজারের বিভিন্ন গিফট আইটেমের দোকানে দেখা গেছে একই চিত্র। তরুণ-তরুণীরা ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে গিফট আইটেমের দিকে ঝুঁকছে। একজন দোকান মালিক জানান, বছর কয়েক আগেও বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা কার্ড বেশী বিক্রি হত। বন্ধু দিবস, ঈদ, ভালবাসা দিবসের ব্যাপক পরিমানে শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি হত। এ ঈদে এখন পর্যন্ত পাঁচশত টাকার কার্ডও বিক্রি করতে পারি নাই। বলতে গেলে ঈদ কার্ডের কোন চাহিদাই নেই। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের গিফটের দোকানসহ অস্থায়ী কিছু দোকান বা ফুটপাতে দেখা যেত ঈদকার্ড বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এবার জকিগঞ্জের একাধিক এলাকা ঘুরে দু’একটি দোকান ছাড়া বাকিগুলোতে ঈদ কার্ড চোঁখে পড়েনি। বড় বড় দোকান গুলোতে ঈদ কার্ড থাকলেও কোন বিক্রি নেই জানান এক দোকানি। সর্বনিন্ম ৫ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ঈদ কার্ড পাওয়া যায়। ঈদ কার্ড বিক্রি কম হওয়ায় অনেক দোকানি মোবাইল এসএমএস ও ইন্টারনেটকে দায়ী করেন। এরই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ আত্মীয়তা আর সামাজিকতা পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে করেন। শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রির সর্বাধিক পরিচিত আজাদ প্রোডাক্স, আইডিয়াল প্রোডাক্স সহ আরো অনেক প্রতিষ্টান কার্ড তৈরী করছে। তারা শুভেচ্ছা কার্ড কোন প্রতিষ্টান বা কোম্পানী এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিকট বিক্রি করে থাকেন। তবে বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক নেতারাও নিজেরাই ছাপার ঘরে গিয়ে ঈদ কার্ড তৈরী করে নেন। বাকি অনেক নেতা মোবাইল এসএমএস দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছার কাজটা সেরে ফেলেন অল্পতেই। তবে স্কুল পর্যায়ের কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এখনও কদর রয়েছে এই ঈদ কার্ডের। তারা এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে ঈদ কার্ড দিতে অনেক দূর পর্যন্ত পায়ে হেটে পৌছে দেয়। তারা সবচেয়ে আনন্দ বোধ করে। বর্তমান ডিজিটাল ও আধুনিকতায় এমনি ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নিজেদের ঐতিহ্য।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !