স্টাফ রিপোর্টার
ছোট্র একটি মেয়ে তানিশা। পুরো নাম আনিকা তাবাস্সুম হক চৌধুরী তানিশা। মেয়েটির বয়স যখন আড়াই বছরের কোটায় তখন থেকেই সে অন্যায়ের প্রতিবাদী। আওয়ামী ঘরানার সন্তান হিসেবে তানিশা শিশু কালেই মা-বাবার কাছ থেকে শুনেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক কাহিনী। সেই থেকে সে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি চায়। তাই মাত্র আড়াই বছর বয়সে ২০০৮ সালের ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কি.মি. দূর সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের শাহগলী নামক স্থানে প্রতিবাদ জানাতে চলে আসে। সেদিন শিশুটি তৎকালিন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠাকে উদ্দেশ্য করে কালো রঙ্গের একটি ছাতায় বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় অবিলম্বে কার্যকর করার দাবী জানায়। যা তখনকার সময়ের পত্র-পত্রিকায় বড় করে ছাঁপা হয়। পুরো এক বছর অপেক্ষার পর রায় কার্যকর না হওয়ায় মেয়েটি তার বড় দুই বোন পূর্বশা ও বিপাশাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রায় কার্যকর করা না হলে ফাঁসিতে ঝুলার ফন্দি করে। সেই অনুযায়ী তারা তিন বোন ২০০৯ সালের ১৫ই আগস্ট মা-বাবাকে নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা না হলে আত্মহত্যা করার আল্টিমেটাম প্রধানমন্ত্রীকে দেয়। একই সাথে তারা সিলেটের তৎকালিন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৬ দফা দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। মেয়ে তিনটির এমন অভিনব প্রতিবাদে পুরো সিলেট জুড়ে তখন সাড়া জাগে। পরবর্তীতে তাদের আল্টিমেটামের ভিতরেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলে তাদের মধ্যে স্বস্তি চলে আসে। সেই দিন তারা তিনি বোন মিলে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে। কিন্তু তানিশা টিভিতে শুনেছে এখনও বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনী বিদেশে থাকায় ফাঁসি কার্যকর করা যায়নি। তাই তার প্রতিবাদী মনের উত্তাল ঢেউ থেমে যায়নি। ৩/৪ বছর অপেক্ষার পরও বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ায় গত ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সেই তানিশা কলসি নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে একাই প্রতিবাদ জানায়। এ সময় সে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা না হলে কলসি গলায় নিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তানিশা বলে, আমার দাবী হচ্ছে বিদেশে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত পলাতক খুনীদের দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা, ১৯শে নভেম্বরকে ‘ন্যায় বিচার প্রাপ্তি দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রিয়ভাবে পালনের ঘোষণা দেয়া ও যে কলম দ্বারা মাননীয় বিচারপতি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় লিখে ঘোষনা করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক কলমটি আমরা তিন সহোদরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধ স্মৃতি জাদুঘরে প্রেরণ করা। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে সে বলে, গিনেস বুকে নাম উঠা তো গৌরবের বিষয়। তবে আমার এই আন্দোলন গিনেস বুকে নাম উঠানোর জন্য নয়, এই আন্দোলন দাবী আদায়ের জন্য। মেয়েটির এই অব্যাহত আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজসহ জেলা আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিপূল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ সময় নেতৃবৃন্দ তানিশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদে রাজনীতিবীদ উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে উঠার দাবী রাখে।
উল্লেখ্য যে, আনিকা তাবাসসুম হক চৌধুরী তানিশার গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের খিলগ্রামে। তাঁর পিতা আহমদুল হক চৌধুরী বেলাল একজন ব্যাবসায়ী, সামাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী এবং মাতা সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী মহিলালীগে সভানেত্রী।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !