স্টাফ রিপোর্টার
জকিগঞ্জের কসকনকপুর ইউনিয়নের চিনিরচকে প্রকাশ্য দিবালোকে দূর্বত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত সিলেট হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষক ফারুক আহমদ লস্করের খুনীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে আতংকে দিন কাটছে ফারুক লস্করের পরিবারের লোকজনের। তারা মনে করেন খুনীরা যে কোন সময় আরোও বড় ধরণের ঘটনা ঘটাতে পারে। জানা যায়, উপজেলার বিয়াবাইল মৌজার ১৫৬৬ নং এসএ খতিয়ানের ৩৬২৭ নং দাগের ৫২ শতক ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চিনিরচক গ্রামের জামাল উদ্দিন লস্কর বাদী হয়ে একই গ্রামের ছিদ্দেক আহমদ লস্কর গংদের বিবাদী করে জকিগঞ্জ সেটেলমেন্ট অফিসে ৩১ ধারায় আপত্তি মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই শনিবার দুপুরে সরেজমিন তদন্তে আসেন জকিগঞ্জ সেটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার আবুল খয়ের। এ সময় নিজ নিজ প্রমাণাদি নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন জড়ো হন। সেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষক ফারুক লস্কর। সার্ভেয়ারের নিকট উভয়পক্ষের জবানবন্দি প্রদানের এক পর্যায়ে আকষ্মিকভাবে বিবাদী পক্ষের লোকজন ফারুক লস্করকে ছুরিকাঘাত করতে শুরু করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মরণাপন্ন হয়ে পড়েন। তাকে রক্ষার জন্য ছোট ভাই মুকুল লস্কর, চাচাতো ভাই আব্দুল মুকিত লস্কর ও আব্দুর রউফ লস্কর এগিয়ে আসলে দুর্বত্তরা তাদেরকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করে চলে যায়। আহতদের জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা ফারুক লস্করকে মৃত ঘোষণা করে বাকিদের সিলেট ওমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ঐদিন জকিগঞ্জ থানায় ৭ জনে নাম উল্লেখপূর্ব অজ্ঞাতনাম আরও ৭/৮ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ একজন আসামীও ধরতে না পারায় ফারুক লস্করের পরিবার চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা মনে করেন, আসামীরা এখন পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্ঠা করছে। নিহত ফারুক লস্করের ৪র্থ শ্রেণী পড়–য়া একমাত্র ছেলে সৌরভ এ প্রতিবেদককে দেখে ভয় পেয়ে দূরে চলে যায়। তাকে আসার কথা বললে সে জানায় ‘ও আমাকে খুন করবে, তাই আমি যাবনা’। একমাত্র মেয়ে জ্যোতি জানায়, বাবা আমাকে খুব আদর করতেন। তিনি ছিলেন আমার জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস। আজ আমরা বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব। আমি আমার বাবার খুনীদের ফাঁসি চাই। নিহত ফারুক লস্করের স্ত্রী ফাতেমা বাহার বলেন, আমরা সিলেটের চারাদিঘির পারে থাকি। আমার স্বামীকে ঘটনার দিন বাড়িতে আসার জন্য অনেকে ফোন দিলে তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে কার কথায় তিনি আসতে সম্মত হয়েছেন তা আমার জানা নেই। শুধুমাত্র আসার বেলা আমাকে তিনি বলেছেন, বাসায় এসে ইফতার করবো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! তাঁর আর বাসায় ফিরে যাওয়া হয়নি। তিনি এই হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড উল্লেখ করে বলেন, এর পেছনে রহস্য আছে। পুলিশ আসামীদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বেরিয়ে আসবে। মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মুকুল লস্কর বলেন, আমার নিরাপরাধ ভাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে ওরা খুন করেছেন। ওদের গ্রেফতার করে যদি সুষ্ঠ বিচার না হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? তিনি অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফ বলেন, আমি আসামীদের ধরতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছি। এদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !