মোঃ এখলাছুর রহমান
ভারতীয় তীর খেলা এখন জকিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। হাটে, ঘাটে, মাঠে, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও দোকান পাটে চলছে এই তীর খেলার টিকেট বিক্রি। এই খেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিন মজুর, রিক্স্রা চালক, ছাত্র কিশোর যুবকসহ সকল শ্রেণীর মানুষ জড়িয়ে পড়েছে। তীর খেলার নামে সর্বত্র চলছে জুয়া। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, এই তীর খেলাটি ভারতের শিলং শহর থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয়। এই তীর খেলার লটারী টিকেট ভারতের বিভিন্ন স্থানে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করা হয়। এজন্য উভয় দেশে রয়েছে তীর খেলার টিকেট বিক্রির জন্য এজেন্ট। এজেন্টের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার টিকেট বিক্রি করা হয়। তীর খেলায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে ৭০ গুন লাভের আশ্বাস দেয়া হয়। অর্থাৎ ১ টাকায় ৭০ টাকা পাওয়া যাবে বলে ঘোষনা করা হয়। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত ক্রমিক সংখ্যার মধ্যে যে কোন সংখ্যার বিপরীতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যত খুশি টিকেট ক্রয় করা যায়। ভারতের শিলংয়ে অনুষ্ঠিত তীর খেলার ফলাফল অনুযায়ী প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টায় একটি মাত্র নম্বরকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। অবশিষ্ঠ ৯৯ টি নম্বরের বিপরীতে প্রাপ্ত সমস্থ টাকা চলে যায় লটারী নিয়ন্ত্রন কারী কর্তৃপক্ষের হাতে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার টিকেট বিক্রি হওয়ার পর এজেন্টরা তাদের কমিশন রেখে সিংহভাগ টাকা ভারতে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে টিকেট বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। বেশ কয়েকবছর ধরে এই তীর খেলার লটারীর টিকেট গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার সর্বত্র বিক্রি হওয়ার পর সম্প্রতি খেলাটি জকিগঞ্জ উপজেলায় বিস্তার লাভ করেছে। জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের শাহবাগ, ঘাটেরবাজার, শাহগলী বাজার ও তার আশপাশ এলাকায় দেদারে তীর খেলার টিকেট বিক্রি হচ্ছে। বারহাল ইউনিয়নের শাহবাগ এলাকার জনৈক মেম্বার এ খেলার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তীর খেলার টিকেট ক্রয় করে দিনমজুর, ক্ষুদ ব্যবসায়ী রিক্স্রাচালক ছাত্র যুবকসহ স্বল্প আয়ের মানুষ প্রতারিত হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। লটারীর টিকেট খরিদ করে অর্থ প্রাপ্তির আশায় প্রতারিত হয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে হতাশা এবং তাদের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহা দেখা দিয়েছে। এসব মানুষকে টিকেট খরিদ করে বিপুল পরিমাণ টাকার লোভে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। ইতিপূর্বে পুলিশ টিকেট বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তীর খেলার অবৈধ টিকেট বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশ তীর খেলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করলেও মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। তীর খেলার টিকেট বিক্রির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা বিদেশ পাচার হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ কাজকর্ম বাদ দিয়ে টিকেট খরিদ করে বিজয়ী হওয়ায় অন্ধ-বিশ্বাসে সর্বশান্ত হচ্ছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের টিফিনের টাকা দিয়ে লটারীর টিকেট খরিদ করছে। তারা তীর খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। অভিবাবকদের অগোচরেই তারা সর্বনাশা পথে অগ্রসর হচ্ছে। খেলাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, যে কেউ এ খেলায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ খেলায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশী। তীর খেলার নামে অবৈধভাবে টিকেট বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত লক্ষ লক্ষ টাকা বিদেশে পাচার রোধ এবং সর্বনাশা খেলাটি বন্ধ করতে খেলার প্রকৃত হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সচেতন মহল গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নে ভারতীয় তীর খেলার নামে জুঁয়া, মদ ও গাঁজা সেবন প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ৮ আগষ্ট বিকেলে স্থানীয় শাহগলী বাস স্টেশনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট সমাজসেবী আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্ত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহগলী বাসষ্ট্যান্ড জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আব্দুল জলিল, আলহাজ্ব বাবরুল হোসেন তাপাদার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন, দুলাল হোসেন, ফজলুর রহমান ও উজ্জল আহমদ প্রমূখ। সভায় দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার লোকদের নিয়ে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের লক্ষ্যে “জাগো বারহাল” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আলহাজ্ব সরফ উদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি, মুহিবুর রহমানকে সহ সভাপতি, আকরাম আলীকে সাধারন সম্পাদক, হাজী বাবরুল হোসেন বাবুল ও দুলাল আহমদকে কোষাধ্যক্ষ করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির নির্বাহী সদস্যরা হচ্ছেন আকবর হোসেন, আব্দুল মতিন, ফজলু মিয়া, ফারুক আহমদ, কাওছার আহমদ, সাম্ছউদ্দীন, দুলাল আহমদ, সুলেমান আহমদ, মাওঃ আব্দুল বাছিত চৌধুরী ও মাওঃ আব্দুর রহমান। সভায় অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের স্বারকলিপি প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !