জাহানারা চৌধুরী ঝর্ণা
তথ্য প্রযু্িক্তর অগ্রযাত্রায় জকিগঞ্জ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে রমজান মাসের সেহরীর আমেজ। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, মাত্র কয়েক বছর আগেও রমজানে সেহরীর সময় মসজিদ ও মাদ্রাসার মাইকের আওয়াজে পরিবারের ছোট বড় সকলেই ঘুম থেকে উঠে এক সাথে সেহরী খেতেন। রোজাদাররা পরিবারের ছোটদের ঘুম থেকে না উঠালেও মাইকের আওয়াজে এমনিতেই শিশুরা উঠে বড়দের সাথে সেহরী খাওয়ার জন্য কান্না শুরু করতো। তাই বধ্য হয়ে পরিবারের বড় সদস্যরা ছোটদের নিয়ে সেহরী খেতেন। মাত্র কিছুদিন আগে দেখা যেত রাত ২টা থেকে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাইকে এলাকার লোকদের জাগানোর জন্য মাইকিং শুরু করতেন। এ সময় বলতেন “ ঘুম থেকে উঠুন, সেহরীর সময় অইগেছে, আপনারা তাড়াতাড়ি সেহরী তৈরী করুন”। এরপর শুরু হত হামদ, নাত এবং ক্বোরআন তেলাওয়াত। সে সময় মসজিদের ইমাম বা ক্বেরাত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুন্দর কন্ঠের ছাত্রদের মুয়াজ্জিন হিসেবে সাথে রাখতেন। কেননা সেহরীর সময় তারা মাইকে হামদ, নাত ও কাসিদা গাইতে হবে। মাঝে মাঝে তেলাওয়াতও করবে। এখানেই শেষ নয়, সেহরীর সময় কিছুক্ষণ পর পর ইমাম সাহেব বলতেন, "এখন সেহরী সময় অইগেছে, আপনারা রান্না-বান্না শুরু করুন"। ৩টা থেকে শুরু করতেন, "এখন সেহরী খাওয়ার সময় অইগেছে, আপনারা খাওয়া-দাওয়া শুরু করুন"। আবার ফাঁকে ফাঁকে চলতো হামদ, নাত, কাসিদা ও ক্বোরআন তেলাওয়াত। এভাবেই সেহরীর সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকত। যা এখন ক্রমেই হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। এখন আর মাইকে ইমাম সাহেবরা এত বেশী ডাকাডাকি করেননা। এছাড়া তখনকার হামদ, নাত ও কসিদা মাইকে শুভা পায়না। জকিগঞ্জের গ্রাম-গঞ্জে একাধিক মসজিদ থাকলেও এখন আর তেমন সাড়া শব্দ শুনা যায়না। আজ থেকে ১০/১২ বছর পূর্বে প্রতিটি মহল্লায় দেখা যেত তরুন ও যুবকরা “এল রে দেখ ওই মাহে রমজান / জাগো রে মুসলমান” এ ধরণের কাসিদা গেয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ঘুম থেকে উঠাতেন। কালক্রমে এই প্রথা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির যুগে এখন আর কাসিদা গেয়ে রোজাদারদের জাগিয়ে তুলতে হয় না। সেলফোনের অ্যালার্মেই রোজাদাররা সেহরী খেতে ওঠেন। তবে আগের মতো আয়োজন না থাকলেও, জকিগঞ্জের মানুষ এখনও ধরে রেখেছেন সেই ঐতিহ্য। সেহরীর সময় মসজিদ ও কোন কোন মাদ্রাসার ক্বেরাত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এখনও ডেকে মানুষের ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই ডাক আগের মতো পৌঁছায় না রোজাদারদের কানে। জকিগঞ্জের কামালপুরের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী তারা মিয়া জকিগঞ্জ সংবাদকে বলেন, ‘‘পনের/বিশ বছর আগেও রমজানের রাতে জকিগঞ্জের সর্বত্র এক ধরনের উৎসবের আমেজ থাকতো। ছেলে-বুড়ো বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পাড়া-মহল্লায় রোজাদারদের জাগিয়ে তুলতো। এখন সেরকম চিত্র তেমন দেখা যায়না। এ ব্যাপারে একজন মসজিদের ইমাম জকিগঞ্জ সংবাদকে বলেন, আগের দিন আর এখন নেই। এখন প্রতিটি ঘরেই মোবাইল আছে। মোবাইলের অ্যালার্মে কাজ না হলেও নিজ নিজ আত্মীয় স্বজন ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন। তাই আমাদের আর বেশী চিল্লা-চিল্লি করতে হয় না। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগও করে না। আগে আগে এনিয়ে অনেকে মসজিদে এসে অভিযোগ করতেন। এরপরও বর্তমানে আমরা সেহরীর সময় কিছুটা ডাকাডাকি করি। আগামীতে হয়তো আর ডাকাডাকির প্রয়োজন হবেনা।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !