
॥ মোঃ ইউনুছ আলী ॥
করিম স্যার! সবার প্রিয় করিম স্যার। মায়াবী চেহারার এই মানুষ গড়ার মেশিন আমাদের মাঝে আর নেই। গত ৮ই জুলাই মঙ্গলবার রাতে সুলতানপুর ইউনিয়নের ঘেচুয়া (বর্তমান তিরাশী) গ্রামের নিজ গৃহে স্বজনদের নির্যাতনের শিকার হয়ে চিরদিনের জন্য তিনি হারিয়ে গেলেন (ইন্না ........... রাজিউন)।
যতদূর জানা যায়, করিম স্যারের ছোট বেলায় তাঁর পরিবার ততটা স্বচ্ছল ছিল না। তাই ছাত্রাবস্থায়ই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ন্যায় মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখানে থেকে নিজে লেখাপড়া করেছেন। পাশাপাশি অনুগজ আব্দুস শাকুরকেও (বর্তমানে পুলিশের এস.আই পদে কর্মরত) তাঁর সাথে রেখে নিজ টিফিনের অর্ধেক খাইয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন। এছাড়া বাকি ভাই-বোন প্রত্যেকের পিছনেও তাঁর হাড় ভাঙ্গা খাটুনি রয়েছে। করিম স্যারের মৃত্যুর ট্রাজেডিকে অনেকেই হাবিল-কাবিলের দ্বন্দ্বের সাথে তুলনা করেছেন। যদিও সেটা ছিল নারী নিয়ে এবং এটা হচ্ছে সম্পদের লোভে। আশা করি পুলিশি তদন্তে প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই করিম স্যারের মতো একজন আদর্শ শিক্ষকের হত্যাকারীরা যেন কোন মতেই পার পেয়ে যেতে না পারে। ওদের বিচারের মুখোমুখী দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। গত ১৩ জুলাই ২০১৪ ইংরেজী রবিবার জকিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে কর্মসুচীতে অংশ নিয়ে এবং মানববন্ধন শেষে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা করে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন। জকিগঞ্জের সুশিল সমাজ, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সহ আপামর জনসাধারণ এই নিষ্ঠুর হত্যার বিচারের দাবীতে ধীরে ধীরে সুচ্চার হচ্ছেন। ফুঁসে উঠেছে করিম স্যারের øেহধন্য ছাত্রসমাজ। মাহে রমজানের কারণে আন্দোলনের ঢেউ তুলা হচ্ছে না, সুতরাং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ পরিস্থিতি বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার আগেই এ যুগের ‘মুহাম্মদী বেগ’দের বিচারের কাঠগড়ার দাঁড় করান।
করিম স্যারের সাথে আমার সর্বশেষ দেখা গত ২৪ জুন ২০১৪ ইংরেজী কাজলসার ইউনিয়নের চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে চৌধুরী বাজার ক্লাস্টারের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষকদের সাব-ক্লাস্টার ট্রেনিং চলছিল। করিম স্যার চারিগ্রামের পথ ধরেই তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তিনি হাত বাড়িয়ে মুসাফাহা করলেন। দেখলাম, ট্রেনিংয়ে আসা অন্য শিক্ষকরাও তাঁকে দেখে এগিয়ে এসে আলাপ জমাতে চাইছেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে স্যার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যান। হ্যাঁ, প্রখর ধী শক্তি, অমায়িক ব্যবহার ও ব্যক্তিত্বের গুণেই তিনি হ্যামিলেনের বাঁশিওয়ালার ন্যায় শত্র“-মিত্র সবাইকে কাছে টেনে নিতে পারতেন।
পরিশেষে জকিগঞ্জে তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল জকিগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বর্তমান কর্মস্থল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরস্থ স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও তাঁর সকল শুভাকাক্সিক্ষর প্রতি সমবেদনা এবং তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করে আমার এই লেখার ইতি টানছি। আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমীন ॥
মোঃ ইউনুছ আলী, সহকারী শিক্ষক-কামালপুর “খ” সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জকিগঞ্জ, সিলেট। মোবাঃ ০১৭৩২-৫৮৮৪৪৩
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !