জকিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে শিরোনামে গত সাপ্তাহে জকিগঞ্জ সংবাদে খবর ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এক সাপ্তাহে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডে বড় ধরণের ৩ টি সড়ক দূর্ঘটনা ছাড়াও ছোট খাটো কয়েকটি দূর্ঘটনা ঘটেছে। খবরে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ মে শনিবার রাতে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের সোনাসারের পশ্চিমে প্রাচীনতম চেঙ্গের বাজার সংলগ্ন ব্রিজে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জকিগঞ্জগামী বিরতীহীন বাস কৃঞ্চশীল (২৮) নামক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তাকে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। একই দিন সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের সাজাপুর নামক স্থানে দ্রুত গতিতে আসা একটি মোটর সাইকেল সাজাপুর গ্রামের শান্তিলাল বিশ্বাসকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ মে রোববার মারা যান। গত ৫ মে সোমবার বিকালে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের শরীফগঞ্জ বাজারে দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাকের চাঁকায় পিষ্ট হয়ে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা মারা যান। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক ট্রাকটি আটক করলেও চালককে ধরতে পারেননি। এনিয়ে সর্ব মহলে আতংক বিরাজ করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্দোলন, সংগ্রাম, চেষ্টা-তদবির কম চলছে না; কিন্তু ফলাফল নেতিবাচক। এর কারণ হিসেবে আমরা মনে করি, চালকের ভুল ও অদক্ষতা এবং আইনে কঠোর শাস্তির বিধান না থাকা। সড়ক দুর্ঘটনাকে নরহত্যা হিসেবে গণ্য করে দায়ী চালকদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়ার আইন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। এর বিরুদ্ধে চালক সংগঠনগুলো তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং আইন পরিবর্তনে সরকারকে চাপের মুখে ফেলে। ফলে আইনটি সংশোধন করে যাবজ্জীবনের স্থলে ৩ বছর কারাদন্ডের বিধান করা হয়। পরবর্তী সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনটি যুযোপযোগী করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং ২০০৭ সালে এ পর্যায়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তারা আইনটির একটি খসড়াও তৈরি করে। এখন পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এখানে আশ্চর্যের বিষয় হল, সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিবান কারো মৃত্যু হলেই কিছুটা সরকারের টনক নড়ে; কিন্তু দেশের হাজার হাজার আমজনতার মৃত্যু কাউকে স্পর্শ করে না। আমরা মনে করি সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি; এই শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। আমাদের দেশের রাস্তাঘাটের দুরবস্থায় যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে গাড়ি চালানোর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি কোনোভাবেই রাস্তায় চলতে দেয়া যাবে না এবং অযোগ্য ও অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করতে হবে। প্রতি বছর রাস্তা মেরামত করতে প্রয়োজনীয় বরদ্দ দিতে হবে। রাস্তা মেরামতে দুর্নীতি কঠোর হস্তে বন্ধ করতে হবে। এ পর্যায়েও কঠোর শাস্তিযোগ্য আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এভাবে প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার সমাধান করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে হাজার হাজার মানুষকে বাঁচানো এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !