রহমত আলী হেলালী
জকিগঞ্জে একের পর এক সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে। গত এক সাপ্তাহে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডে বড় ধরণের ৩ টি সড়ক দূর্ঘটনা ছাড়াও ছোট খাটো কয়েকটি দূর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। আর এসকল দূর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জকিগঞ্জ উপজেলার যাত্রীরা। ফলে আতংকিত হয়ে পড়েছেন জকিগঞ্জের সাধারণ মানুষ। জানা যায়, গত ১১ জুন বুধবার সকালে জকিগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া সিলেটগামী একটি বাস গোলাপগঞ্জের চৌঘরী নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে সটকে পড়ে। এতে প্রায় ১৫ জনের মতো লোক গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিক এলাকার লোকজন এসে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি.ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় আহতদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা না গেলেও উদ্ধারকারীরা বলেন, আহত সকলেই জকিগঞ্জ উপজেলার লোক। একই দিন বেলা ১১টায় জকিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি বাস কালিগঞ্জ বাজারের মেসার্স আবুল কালাম ট্রেডার্সের সামনে মানিকপুর গ্রামের পথচারী এনাম আহমদ (৪৫)কে ধাক্কা দিলে তিনি গাড়ির নীচে পড়ে যান। এ সময় তার কোলে থাকা দুই বছরের একটি মেয়েও সড়কে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় বাবা-মেয়ে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেলেও সিলেট জ ১১-০৪৮৪ নম্বর গাড়িটি আটক করে বিক্ষোব্ধ জনতা। এ দু’টি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৩ জুন শুক্রবার বিকালে জকিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেট জ ১১-০৫৭৪ নম্বর বাসটি আটগ্রামের পশ্চিমে কানাইঘাট উপজেলার রামপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোন প্রাণহানি না ঘটলেও প্রায় ২০ জনের মতো লোক গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে ৪ জন লোক ছাড়া বাকি সকলেই জকিগঞ্জ উপজেলার বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া গত ১১ জুন সন্ধায় আটগ্রাম বাসষ্টেশনে দু’টি লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন ও গত ১৪ জুন শনিবার শাহগলীর খিলগ্রামে একটি টলি খাদে পড়ে ১ জন লোক গুরুতর আহত হন। পরপর বেশ কয়েকটি সড়ক দূর্ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত জকিগঞ্জীদের মধ্যে দেখা দিয়ে সীমাহীন শংকা। তাদের মতে, দেড় মাস পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। জীবন-জীবিকার তাগিদে আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে হবে। আর বাড়ি ফেরার এই প্রতিযোগিতায় প্রায়ই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত যাত্রী ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে ঈদের সময়গুলোতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এমতাবস্থায় দূর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। সচেতন মহলের অনেকে বলেন, জকিগঞ্জে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলছে। পত্রিকার পাতায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার খবর। আর এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে জনসচেতনতার অভাব। সড়কের বাঁকগুলোর অধিকাংশ জায়গায় সতর্কীকরণ নোটিশ নেই। আবার অধিকাংশ গাড়িচালকই অশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীন। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় আহত এবং নিহত হচ্ছে আমাদের কোনো না কোনো প্রিয়জন। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনার ক্ষত কোনোভাবেই সারিয়ে তোলা যাচ্ছে না। তাছাড়া জনগণের যাতায়াতকে নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ লক্ষণীয় নয়। জকিগঞ্জের অতিসাম্প্রতিক কালে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র পর্যালোচনা করলে এক ভয়াবহ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সাপ্তাহিক জকিগঞ্জ সংবাদে প্রকাশিত গত মে মাসের সড়ক দূর্ঘটনার খবর সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মে শনিবার রাতে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের সোনাসারের পশ্চিমে প্রাচীনতম চেঙ্গের বাজার সংলগ্ন ব্রিজে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জকিগঞ্জগামী বিরতীহীন বাস কৃঞ্চশীল (২৮) নামক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তাকে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। একই দিন সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের সাজাপুর নামক স্থানে দ্রুত গতিতে আসা একটি মোটর সাইকেল সাজাপুর গ্রামের শান্তিলাল বিশ্বাসকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ মে রোববার মারা যান। গত ৫ মে সোমবার বিকালে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের শরীফগঞ্জ বাজারে দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাকের চাঁকায় পিষ্ট হয়ে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা মারা যান। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক ট্রাকটি আটক করলেও চালককে ধরতে পারেননি। এনিয়ে সর্ব মহলে আতংক বিরাজ করছে। তাই অনতিবিলম্বে জকিগঞ্জ-সিলেট রোডে দূর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি এলাকাবাসী অনুরোধ জানিয়েছেন।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !