শাহগলিবাসীর জন্য আশার আলো
রহমত আলী হেলালী
জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের শাহগলি বাসষ্টেশনের পার্শ্বে সদ্য প্রতিষ্ঠিত “শাহগলি আদর্শ শিশু বিদ্যানিকেতন” শাহগলিবাসীর জন্য এক আশার আলো। এই প্রতিষ্ঠানটি যেমনি একটি বিদ্যাপীঠ ঠিক তেমনি একটি ঐতিহ্যের স্বাক্ষি। কেননা ‘শাহগলি’ বারহাল ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী নাম হলেও এই নামে সে এলাকায় আজও কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। ফলে সময়ের ব্যবধানে নামটির শুদ্ধ উচ্চারণ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ‘শহগলি’ এখন ‘ছাগলি” হতে শুরু করেছে। তাই এই ঐতিহ্যবাহী নামটিকে দিয়ে কোন একটি প্রতিষ্ঠান করা ছিল সে এলাকার মানুষের সময়ের দাবী। যাক অবশেষে সেই দাবীটি পূরণ করলেন এই এলাকারই এক গর্বিত সন্তান কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর মোঃ আজাদ উদ্দিন। একই সাথে তিনি বারহাল ইউনিয়নবাসীর জন্য সম্ভাবনাময় একটি বিদ্যাপীঠ গড়ে তুললেন। সরেজমিন পরির্দশনে গিয়ে দেখা যায়, অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের শাহগলি বাসষ্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫০ হাত ডানে চারদিকে দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত একটি বাসাতে লেখা-পড়া চলছে। ছোট্র মণিদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অত্যান্ত মনোরম শ্রেণী কক্ষ, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের জন্য অফিস কক্ষ ও অভিভাবকগণের বসার কক্ষ দেখে যে কেউ অবাক হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানের বিশাল আঙ্গীনায় রয়েছে দোলনা ও চেরচেরীসহ শিশুদের খেলাধুলার জন্য মুক্ত জায়গা। ছোট ছোট শিশুরা স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বাহিরে না যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসেই রয়েছে একটি দোকানঘর। তাছাড়া স্কুলের নিজস্ব গেইট রয়েছে। যার ফলে স্কুল ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক ছাড়া আর কেউই ক্লাস চলাকালীন প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে মাতৃসূলভ আচরণের মাধ্যমে ইংরেজীকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলা মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করানো হয়। এছাড়া হাতের লেখা ও স্পোকেন ইংরেজীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের পাশাপাশি শিশুদের সৃষ্টিশীল করার লক্ষে চিত্রাংকন, আবৃতি, সংগীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জানা যায়, শিশু শিক্ষাদানের মানসিকতাকে বিবেচনা করে ও দক্ষ শিক্ষক দ্বারা পাঠদানের লক্ষে প্লে থেকে স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ পর্যন্ত এ বিদ্যালয়টিতে ৮ জন শিক্ষক/ শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যাতে কোন কারণ বশত ১/২ জন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে লেখা-পড়ার কোন ব্যাঘাত না ঘটে। একজন অভিভাবক বলেন, “একদিন ফুয়া-ফুড়িন স্কুলও না গেলে স্যার অখলে ফোন করিয়া কারণ জিকাইন। হেদিন এক লন্ডনী আমার বাড়িত বেড়ানিত আওয়ার বাদে ওলা স্কুল থাকি ফোন দেওয়া দেকিয়া লন্ডনী কুটুমে খইন, ইকানও লন্ডনর লাখাইন অইগেলওনি?” স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার নিরলস আন্তরিকতা ও স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগনের যৌথ প্রয়াসের ফলে মাত্র কিছুদিনের মাথায় প্রতিষ্ঠানটি সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। আমি আশাবাদী সুদূর ভবিষ্যৎ বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে দূর বহুদূর। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মোঃ আজাদ উদ্দিন বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো বারহালের শিক্ষা সংস্কৃতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। দীর্ঘ আকাঙ্খিত সেই স্বপ্নের ফসল আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি শতভাগ আশাবাদী, এই বিদ্যালয়টি শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর এই এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও শিক্ষামুখী, আধুনিক ও বিজ্ঞানমুখী করে গড়ে তোলবে।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !