সমকালীন ইতিহাসে আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড। যা প্রণয়ন করেছিল ১/১১ এর একটি অনিয়মিত সরকার। প্রায় দেড় কোটি ভূয়া ভোটারের হাত থেকে নির্বাচনকে মুক্তি দিয়ে এ ভোটার আইডি কার্ডের ভিত্তিতে দেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। পরে ভোটার আইডি কার্ডের এ ডাটাবেজটিকে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড হিসেবে গন্য করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারটিকে সব সরকারী-বেসরকারী সেবা কাজে প্রয়োজনীয় প্রমানিক তথ্য হিসেবে গণ্য করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। ফলে বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সরকারী সব সেবা পাওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অপরিহার্য। প্রথমদিকে বিষয়টি অনেকেই আমলে না নিলেও এখন প্রতিটি কাজে এটি ছাড়া এক পা-ও হাঁটা যাচ্ছে না। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য সবাই তৎপর। এখন সবাই যখন সচেতনভাবে এটি পেতে আগ্রহী, তখন দেখা যাচ্ছে এটি পাওয়ার জন্য তাদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। হতে হচ্ছে হয়রানীর শিকার। ভোটার আইডি কার্ড প্রণয়ণের সময় দুই দফা বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন এ প্রজেক্টে কর্মরত তরুণরা। শুধু ফটো তোলার সময় ভোটারকে একটি কেন্দ্রে গিয়ে ল্যাপটপের ওয়েব ক্যামেরার সামনে বসতে হয়েছিল। আর এখন নাগরিক এবং ভোটাররা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে নানাভাবে বিড়ম্বিত হচ্ছেন। ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে পাওয়ার কথা কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভূক্তভোগী নাগরিককে ছুটতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দফতরে। বর্তমানে নতুন রেজিষ্ট্রেশন করতে সময় লাগে নুন্যতম ২ মাস, মাইগ্রেশন করতে কয়েক মাস এবং ভূল সংশোধন করতে লাগছে ৩/৪ দিন। এসব ভোগান্তির উদাহরণ উঠে এসেছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। সহজে এবং দ্রুততম সময়ে এটি না পাওয়ার কারণে নাগরিকরা ট্যাক্স পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছেন না। এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? একই কারণে সরকারী বিভিন্ন সেবার বিপরীতে প্রদেয় অর্থও জমা দিতে পারছেন না তারা। এমনকি অনেক চাকরীপ্রার্থী চাকরীতে যোগ দিতে পারছেন না জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে তাদের শিক্ষা সনদের তথ্যের সাযুজ্য না থাকার কারণে। যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় আইডি কার্ডের ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন ছিল স্বচ্ছন্দ এবং সহজ, সেখানে এটি পরিণত হচ্ছে নাগরিকদের পায়ে এক যন্ত্রণাদায়ক বেড়ি বিশেষ। এটা একেবারেই অনভিপ্রেত বিষয়। আমরা মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সহজ সেবা মানুষ যাতে ঘরে বসেই পেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আশা করি, এ সেবাটি কেবল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছ থেকে নয় প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য কেন্দ্র থেকেও যাতে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। মানুষকে হয়রানী করার আমলাতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারী কর্মকর্তাদের কাজ দেশের মানুষকে সেবা দেয়া; শাসন করা, কিংবা হয়রানী করা নয়।
0 মন্তব্য:
Speak up your mind
Tell us what you're thinking... !